রক্তচাপ একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী আছেন তাদের জন্য ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, হঠাৎ করেই অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যেতে দেখা যায়, তখন আমরা অনেক সময় বিচলিত হয়ে পড়ি। এই অবস্থায় আমাদের আসলে করণীয় কি তা আমরা আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেব। অনেক সময় দুশ্চিন্তা করলে, বা হঠাৎ করে কোন দুর্ঘটনার সংবাদ শুনলে অথবা কোন দুঃসংবাদ কানে আসলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ আসলে কি
রক্তনালীর দোলে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার শক্তিকে রক্তচাপ বলে। এটি ১২০/৮ ০ স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে রক্তচাপ কিছুটা বেড়ে উচ্চ রক্তচাপ হয়। উপরের চাপ বা নিম্নচাপ ৯০ ছাড়িয়ে গেলে এটি চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
দুটি কারণে উচ্চ রক্তচাপ থাকতে পারে। তীব্র এবং দীর্ঘমেয়াদী। উত্তেজনা বা অন্য কোন কারণে রক্তচাপ আকর্স্মিক বৃদ্ধি হলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এটি উচ্চ রক্তচাপের একটি ক্ষেত্র। উচ্চ রক্তচাপের ফলে অপ্রত্যাশিতভাবে হার্ট ফেলিওর বা স্ট্রোকও হতে পারে।
আবার রক্তনালীতে ব্লক তৈরি হওয়ার ফলে বা উচ্চ রক্তচাপ এর ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। সেই জামায়াত মাথায় পৌঁছে স্টোকও হতে পারে। আবার বেশি উচ্চ রক্তচাপ এর ফলে কোন ধমনী ফেটে গিয়েও স্টোক হতে পারে। অতএব উচ্চ রক্তচাপ পুষে রাখা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
আরও পড়ুনঃ মাথা ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়
উচ্চ রক্তচাপ এর কারন কী কী
- বংশগত বা পারিবারিক।
- জেনেটিক প্রভাব।
- বয়স।
- শারীরিক কার্যকলাপ জনিত সমস্যা।
- ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার।
- বেশি লবণ খাওয়া।
- উদ্বেগ বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
- মদ্যপান করা।
- অতিরিক্ত ওজন।
- গর্ভাবস্থা।
- কিডনি জনিত সমস্যা।
- থাইরয়েডের সমস্যা।
- হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম।
- ফিওক্রোমোসাইটোমা।
- অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলির সাথে সমস্যা।
- কুশিং সিন্ড্রোম।
- অ্যাক্রোমেগালি।
- বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাওয়া ইত্যাদি।
যেসব লক্ষণে বুঝবেন উচ্চ রক্তচাপ (প্রেসার) ওঠানামা করছে
যেমন মাথা ঘোরা,ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া,বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড় করা,অলসতা, চোখে ঝাপসা দেখা,এবং সাধারণত শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া নিম্ন রক্তচাপের সাধারণ লক্ষণ। অপুষ্টি ছাড়াও নিম্ন রক্তচাপের কারণ হতে পারে এমন অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে অত্যাধিক ঘাম, ডায়রিয়া বা প্রচুর বমি হওয়া,হেমোপটিসিস এবং অত্যাধিক স্টোমা রক্তপাত সহ যে কোন ও অভ্যান্তরীন রক্তপাত।
আবার হর মনের প্রভাবে গর্ভবতী মায়েদের গর্ভাবস্থার প্রথম ছয় মাস লো প্রেসার হতে পারে। হঠাৎ করে বসে থাকা বা শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে উঠলে, মাথা হালকা বা অজ্ঞান বোধ করা, চোখের অন্ধকার দেখা, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, হাত পা ঠান্ডা হওয়া,অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত হওয়া,বা অস্বাভাবিক দ্রুত হৃদিস্পন্দন,নাড়ী বা স্পন্ধন বেড়ে যাওয়া।
আরও পড়ুনঃ রমজানের স্বাস্থ্য টিপস
উচ্চ রক্তচাপ হলে কি করবেন
সে সময় আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে তাৎক্ষণিক ভাবে বসে পড়া বা বিশ্রামে চলে যাওয়া। কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার পর আপনার রক্তচাপ বা প্রেসার মেপে দেখতে হবে যে স্বাভাবিক অবস্থায় আছে কিনা। যদি স্বাভাবিকের চেয়ে রক্তচাপ বা প্রেসার বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে আপনার কাজ হচ্ছে ঐদিন আপনি প্রেসারের জন্য যে ওষুধটি খেতেন সেই ওষুধ তাৎক্ষণিক খেয়ে নিতে পারেন।
ওষুধ খাওয়ার এক ঘন্টা পর আপনার রক্তচাপ বা প্রেসার মেপে দেখতে হবে যে আপনার রক্তচাপ বা প্রেসার কমে আসছে কিনা। তার পরেও যদি রক্তচাপ বা প্রেসার না কমে আমার মনে হয় যে আপনি তাৎক্ষণিক একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অথবা আপনি পরপর তিন দিন প্রতি রাতে একটি ঘুমের ঔষধ খেয়ে চেষ্টা করতে পারেন।
দেখবেন আপনার রক্তচাপ বা প্রেসার স্বাভাবিক অবস্থায় নেমে এসেছে। তারপরেও যদি আপনার প্রেসার অপ্রত্যাশিত ভাবে বেড়ে যায় তাহলে আপনি একজন কার্ডিওলজিস্ট বিশেষজ্ঞ এর চিকিৎসা নিতে পারেন। তবে পরপর যদি তিন দিন আপনি ঘুমের ওষুধ নিয়মিত করে খান তাহলে প্রেসার স্বাভাবিক অবস্থাই ফিরে আসবে।
উচ্চ রক্তচাপ শরীরের কি কি ক্ষতি করে
- দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপের কারণে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় যা অনিয়ন্ত্রিত এবং চিকিৎসা না করার কারণ। এটি ছাড়াও অন্যান্য গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্টের পেশীর ক্ষয় হয়। ফলস্বরূপ, হার্টের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হয়, যা হার্ট অ্যাটাক এর কারণ হতে পারে।
- কিডনির সমস্যাও উচ্চ রক্তচাপের কারণে হতে পারে।
- মস্তিষ্কের রক্তচাপও উচ্চ রক্তচাপের কারণে বেড়ে যায়। যার ফলে স্ট্রোক হতে পারে।
- উচ্চ রক্তচাপ এমনকি অন্ধত্ব এবং রেটিনাল হেমোরেজ হতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ