এস এস সি পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

 যেকোনো কিছুর মূল্যায়ন করার একমাত্র উপায় হল পরীক্ষার মাধ্যমে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনের প্রথম বড় অর্জন হলো এসএসসি পরীক্ষা। বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্কলিন,একবার মন্তব্য করেছিলেন যে শিক্ষা ছাড়া একজন প্রতিভা খনিতে রূপার মতো। এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে দীর্ঘ দশ বছরের শিক্ষার মূল্যায়ন করা হয়।

এস এস সি পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

 অতএব, এই পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর জীবনের প্রথম ধাপ এবং উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে তাদের যাত্রা শুরুর প্রতিনিধিত্ব করে। এই এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আপনার জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন। এই পরীক্ষা পদ্ধতিটি অন্য সব কিছুর মতই বেশ কিছু সহায়ক পরিবর্তন দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

    সময়মত পড়া শেষ করা 

    এসএসসি পরীক্ষার আগে প্রতি রাতে আমরা নিজেদেরকে বলি, যে "আমি আজ পুরো বইটি পড়ে শেষ করে ফেলব! আমার এ’ প্লাস পাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।অর্থাৎ আমার বিগত দিনের যে পড়ার ঘাটতি রয়েছে তা আমি পুসিয়ে নিতে পারব। আমরা রাতে ঘু্মাতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন এই চিন্তা করেই মনকে বুঝ দেই।

    আরো পড়ুনঃ ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস

    কিন্তু আমরা বোকার মত আজকের পড়া আজকে না করে কালকের জন্য রেখে দেই। আমরা ভাবি এসএসসি পরীক্ষা তো অনেক দেরি আছে তার আগে সব করে নেব।কিন্তু সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাই এসএসসি পরীক্ষার রাত্রে দেখা যায় যে, পড়ার অনেক চাপ পড়ে যায়,যা অনেক দুঃখজনক। কারণ ভালো ফলাফল পেতে গেলে সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে হবে। 

    এসএসসি পরীক্ষায় অভিনবত্ব উপেক্ষা করুন

    এসএসসি পরীক্ষায় বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অদ্ভুত কিছু ঘটছে। অন্য কথায়, তারা একটি নতুন বিষয় বা অধ্যায় দেখার সাথে সাথে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়া শুরু করে। এই অদ্ভুত সমাধান ব্যবহার করা মোটেই কাম্য নয়। কারণ শেষ মুহূর্তে নতুন কিছু শেখা এখন অসম্ভব। 

    ফলস্বরূপ, আপনি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সেগুলি আবার পড়ার মাধ্যমে আয়ত্ত করতে হবে।ফলেদেখা যাবে যে আপনার আগের মুখস্ত করা পড়াগুলো আপনি ভুলে যাবেন, নতুন প্রশ্ন আয়ত্ত করতে গিয়ে। কারণ পাঁচটি প্রশ্ন টুকরো টুকরো লেখার চেয়ে সম্পূর্ণভাবে চারটি প্রশ্ন লেখা অনেক ভালো।

    এসএসসি পরীক্ষার জন্যে রুটিন করে পড়া

    “যখন পরীক্ষার রেজাল্ট হয় তখন আমি মনে মনে বলি,পরের বার যেন আমি ভালো রেজাল্ট করি।” তোমাদেরও কি এমনটা মনে হয়? কিন্তু কিভাবে আমরা ভালো রেজাল্ট করতে পারি তা বুঝে উঠতে পারি না।অনেক সময় মনে হয় একবার পড়ার টেবিলে বসে পুরো বই শেষ করে ফেলব। কিন্তু পরক্ষণে দেখা যায়, তাড়াহুড়ো করে কোন পড়া ঠিকমতো করা হয় না। 

    অতএব, পড়া শুরু করার আগে একটি রুটিন তৈরি করা খুবই জরুরী। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিটি বিষয়ের কতটুকু শেষ করতে হবে তার একটি সময়সূচী তৈরি করুন এবং সে অনুযায়ী পড়াশোনা করুন। এভাবে রুটিন অনুযায়ী পড়াশোনা করলে দেখবে এসএসসি পরীক্ষার আগে তোমার সব বই কমপ্লিট হয়ে গেছে। 

    এসএসসি পরীক্ষার জন্যেপড়ুন, পড়ুন, এবং আরো পড়ুন

    এসএসসি পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন যে তারা দুই বছর ধরে পড়ছেন।কিন্তু সর্বদা আপনার অধ্যায়ন বজায় রাখা উচিত। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, সেটা ক্রিকেট ম্যাচের রোমাঞ্চকর মুহূর্ত হোক বা এসএসসি পরীক্ষা হোক,আপনাকে অবশ্যই পরিশ্রম করে যেতে হবে। কিন্তু পরিশ্রম ছাড়া ভালো ফলাফল পাওয়ার আশা করা বোকামো ছাড়া আর কিছুই নয়।

    তাই আপনি অতি মনোযোগের সাথে অধ্যায়ন করে প্রতিটি বই দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করুন। যদি আপনি একটি বই নিয়ে অধ্যায়ন করতে বসেন এবং বুঝার চেষ্টা করেন যে এসএসসি পরীক্ষায় কিভাবে প্রশ্ন করা হয় বা কি ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে।অর্থাৎ এসব নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ করা উচিত তাহলে আপনি অনেক কিছু বুঝতে পারবেন। এবং এসএসসি পরীক্ষা আপনার কাছে সহজ হয়ে উঠবে ও পরীক্ষার ভীতি দূর হয়ে যাবে।ফলে পড়াশুনায় দিন কাটাতে হবে।

    এসএসসি পরীক্ষায় যে বিষয়গুলি গুরুত্বের ভিত্তিতে আলাদা করা উচিত

    এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বিষয়ের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।মনে করো, তোমার পছন্দের বিষয় হচ্ছে রসায়ন বিজ্ঞান। তুমি রসায়ন বিজ্ঞান খুব ভালো পারো এবং এটি পড়তে তোমার খুব ভালোও লাগে। এতই ভালো লাগে যে প্রতিদিনই তুমি এই বিষয়ই পড়ে যাচ্ছ। আর ওদিকে তোমার পদার্থবিজ্ঞান,গণিত করার কথা মনেই নেই।

    আবার তুমি মনে করলে যে,এক সপ্তাহ পদার্থবিজ্ঞান শেষ করবে এবং পরের সপ্তাহে গণিত শেষ করবে। কিন্তু পর পর পদার্থবিজ্ঞান বা গণিত করার কারণে তোমার একঘেয়েমি চলে আসবে।কারণ একই পড়া কতক্ষণ পড়া যায়। তাই পড়াতে ভিন্নতা আনা  দরকার। 

    অর্থাৎ সময় নির্ধারণ করে ও বিষয় নির্ধারণ করে রুটিন করে প্রতিটি বিষয়ে পড়তে হবে তাহলে পড়াতে একঘেয়েমি দূর হবে। এবং অধ্যায়নটা অনেক আনন্দমুখী হয়ে উঠবে।ফলে খুব সহজভাবে তুমি এসএস সির সিলেবাস শেষ করতে পারবে। 

    আমাদের পুরনো ধারণা আছে যে পড়াশোনা অনেক কঠিন আর বেশি বেশি পড়াশোনা করলে ভালো রেজাল্ট হবে। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বলা হয়ে থাকে “স্টাডি স্মার্ট।”কারণ সঠিক নিয়মে পড়াশোনা করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

    এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি মানসিকতা তৈরি হয়ে থাকে যে তাদের শুধু কঠিন বিষয় অধ্যয়ন করা উচিত ।কিন্তু কঠিন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে গিয়ে তারা অনেক সহজ জিনিস ভুলে যায়। যাইহোক, এটি উল্লেখযোগ্যভাবে ফলাফল প্রভাবিত করে। 

    বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর ফলাফল দেখায় যে সামাজিক বিজ্ঞান এবং বাংলা দ্বিতীয় পত্রের মতো সাধারণ বিষয়গুলিতে তারা পছন্দসই ফলাফল অর্জন করতে পারে না। মূলত,আমরা উচ্চতর গণিত, পদার্থবিদ্যা বা রসায়ন নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকি।ব্যবসায়িক শাখার তরুণরাও একই রকম আচরণ করে। তাই সবকিছুকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

    যদিও আপনি এসএসসি পরীক্ষার মূল বিষয়ের অধ্যায়নে কোন ত্রুটি রাখবেন না।।অর্থাৎ আপনি সকল বিষয়ের একটি রুটিন করুন যেগুলি বিষয় অনেক সহজ সেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন।সেই সহজ বিষয়গুলিতে  প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে ব্যয় করতে পারেন।

    অর্থাৎ আপনি যখন ঘুম থেকে উঠবেন তখন আপনি সেই বিষয়গুলিতে দুই ঘন্টা ব্যয় করতে পারেন। সন্ধ্যার আগে আপনি আবার ওই সহজ বিষয় গুলিতে একটু চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। তাহলে দেখা যাবে সকল বিষয়ে আপনার প্রস্তুতি থাকবে।

     নিজেই সাজেশন তৈরি কর 

    অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়,এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে থিওরি খুব ভালোই বুঝতে পারলেও গাণিতিক সমস্যা সমাধানে সে দুর্বল। অথবা ধরো, বাংলা প্রথম পত্রে একটি গল্প তুমি খুব ভালো করে পড়েছো কিন্তু তার উপর করা সৃজনশীল প্রশ্ন তুমি ঠিক ধরতে পারছো না। 

    এটি মূলত অনুশীলনের ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। আর এজন্যই টেস্ট পেপার দেখে সমাধান কর‍তে বলা হয়। এস এস সির বিগত সালের প্রশ্নগুলো দেখে তুমিও কিন্তু প্রশ্নের প্যাটার্ন বুঝে নিতে পারো।অর্থাৎ বিগতশাল গুলোতে কোন প্রশ্নগুলো বারবার এসেছে সেগুলো নিয়ে তুমিও একটি সাজেশন তৈরি করতে  পারো। 



    তাই পরিশেষে সকল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা রইল। 


    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ