পেটের মেদ কমানোর উপায়,পেটের মেদ নিয়ে কমবেশি সবাই চিন্তিত। পেটে অতিরিক্ত মেদ জমার কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও কোলন ক্যান্সার ইত্যাদির কারণ হতে পারে। পেটের মেদ এক ধরনের ভিসেরাল ফ্যাট। পেটের মেদ বেড়ে গেছে এটা বোঝার উপায় হচ্ছে কোমরের হাড় পর্যন্ত ঠিক মধ্যভাগ একটি ফিতা দিয়ে মেপে দেখি। মহিলাদের ৮০ সেন্টিমিটার এবং পুরুষদের ৮০ সেন্টিমিটারের বেশি হলে আমরা বুঝবো যে আমার পেটে মেদ জমেছে।
পেটের মেদ কমাতে কি করবো
পেটের মেদ কমানোর উপায় হচ্ছে খাদ্যের পরিবর্তন আনার পাশাপাশি আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যায়ামের দরকার।
- কোমল পানীয়, মিষ্টি জাতীয় খাবার, পেস্ট্রিকেক ,অতিরিক্ত শর্করা সমৃদ্ধ খাবার, ও চকলেট খাওয়া পরিত্যাগ করুন।
- শাকসবজি, ফলমূল, আমিষ ও আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খান।
- প্রতিনিয়ত হাঁটুন এবং কায়িক পরিশ্রম বাড়াতে হবে।এছাড়াও পেটের মেদ কমানোর কিছু ব্যায়াম করতে হবে।
পেটের মেদ কমানোর জন্য সিট আপ ব্যায়াম
পেটের মেদ কমাতে সিট আপ ব্যায়াম করতে প্রথমে একটি মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। এরপর দুই পা ভাঁজ করতে হবে। সামনের দিকে হাত হাঁটু বরাবর সোজা থাকবে। এবার নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সামনের দিকে সোজা উঠে বসুন।
অতপর পা ভাজ অবস্থায় আবার আগের অবস্থানে শুয়ে পড়ুন। বসা অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। অর্থাৎ আবার শুয়ে পড়ুন এবং আবার উঠে বসুন এভাবে একবার হবে। ১২ বার করে এক মিনিট বিশ্রাম নেবেন এবং এক মিনিট পরে আবার শুরু করবেন একই নিয়মে। পেটের মেদ কমানোর প্রাথমিক অবস্থায় এভাবে করতে হবে এবং পরে আরো বাড়াতে হবে।
পেটের মেদ কমানোর জন্য লেগ রেস ব্যায়াম
পেটের মেদ কমাতে লেগ রেস ব্যায়াম হচ্ছে অন্যতম। প্রথমে মেঝেতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। পা দুটো ৯০ ডিগ্রী উপরে সোজা করে তুলে দিন। হাত দুটো সোজা রেখে নিঃশ্বাস নিতে নিতে পা দুটো নিচে নামান।
পা কিন্তু মেঝেতে লাগানো যাবে না। এবং এই অবস্থায় শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ৯০ ডিগ্রি উপরে পা দুটো তুলুন। এবার নিচে নামিয়ে পা থেকে কোমর পর্যন্ত যাতে মেঝেতে লেগে থাকে। এভাবে ১২ বার করতে হবে। পেটের মেদ কমানোর এই ব্যায়াম তলপেটের জন্য খুবই কার্যকরী।
আরো পড়ুনঃ শরীরের ফিটনেস ধরে রাখার কৌশল
পেটের মেদ কমানোর জন্য ক্রাঞ্চেস ব্যায়াম
পেটের মেদ কমাতে ক্রাঞ্চেস ব্যায়াম করতে প্রথমে মেঝেতে শুয়ে পড়তে হবে। দুই পা পরিমান মত ফাঁকা রেখে ভাঁজ করতে হবে । হাত দুটি কানের পিছনে অর্থাৎ মাথার দুইপাশে রাখুন। ঘাড়ে কোন চাপ না দিয়ে মুখ দিয়ে ফু দেওয়ার মতো করে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে উপরের দিকে উঠুন।
ঘাড় বাঁকা না করে আপনার পেটের মাংস পেশীতে খেয়াল করবেন। ঘাড় সোজা রেখে আপনি উপরের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। মেঝে থেকে আপনার মাথার কিছুটা ফাঁক রেখে নিঃশ্বাস নিতে নিতে নিচে নামবেন। অর্থাৎ এভাবে একবার উপরে উঠুন এবং একবার নিচের দিকে ক্রাঞ্চ করুন।মাঝারি তালে এই ব্যায়াম করতে হবে খুব দ্রুত করা যাবে না।
এভাবে ১২ বার করে একবার শুয়ে বিশ্রাম নেবেন। ১২বার হলে এক সেট এভাবে দুই সেট করতে হবে এবং পেটের মাংসপেশি সংকোচন ও প্রসারনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যা পেটের মেদ কমানোর জন্য সাহায্য করে।
পেটের মেদ কমানোর জন্য প্লাঙ্ক ব্যায়াম
পেটের মেদ কমাতে প্লান্ট ব্যায়াম অন্যতম। এই ব্যায়াম করতে প্রথমে পায়ের টোয়ের ওপর এবং কনুইয়ের ওপর ভর করে দুই হাত ভাজ করে উপুর হয়ে শুয়ে শরীরকে একটি সমান্তরাল অবস্থায় রাখতে হবে। এভাবে ১০-১৫ সেকেন্ড থাকতে হবে।
প্রথমদিকে ১০-১৫ সেকেন্ড থেকে পরে সময় বাড়িয়ে ৪০-৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত থাকতে পারবেন। প্রতিবার করার পর একটু বিশ্রাম নেবেন এভাবে দুই-তিনবার করবেন। এভাবে আপনার পেট, পিঠ ও হাতেরও মেদ কমবে। তবে পেটের ব্যায়াম প্রতিদিন করা যাবে না,একদিন পরপর করতে হবে। আপনি পেটে ব্যায়াম করার ফলে যদি
আপনি পেটের মাংসপেশীতে ব্যথা অনুভব করেন তাহলে আপনি বুঝবেন যে আপনার ব্যায়ামগুলো কাজে লেগেছে অর্থাৎ পেটের মেদের যে ফ্যাট সেল রয়েছে সেগুলো ভাঙতে শুরু করেছে। এভাবে দুই থেকে তিন মাস টানা ব্যায়াম করলে আপনি ভাল ফলাফল পাবেন এবং পেটের মেদ কমে যাবে।
পেটের মেদ কমানোর জন্য রাশিয়ান অ্যাবস টুইস্ট ব্যায়াম
পেটের মেদ কমাতে রাশিয়ান অ্যাবস টুইস্ট ব্যায়ামের কোন তুলনা নেই। এই ব্যায়াম করতে প্রথমে পা দুটো সোজা করে বসে পড়তে হবে। পা দুটো ভাজ করে পায়ের পাতা মেঝে থেকে একটু উঁচুতে নিয়ে যেতে হবে
এবং শরীরের উপরের অংশ একটু পিছন দিকে নিয়ে যেতে হবে। হাত দুটি একবার ডানদিকে ঘুরে ডান কোমরের কাছে আবার বাম দিকে ঘুরে বাম কোমরের কাছে নিয়ে আনতে হবে। এভাবে ১২ বার করে দুই সেট করতে হবে। তাহলে আপনার পেটের মেদ কমবে।
পেটের মেদ কমানোর পাঁচটি উপায় অবলম্বন
- স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবেঃ সকালের খাবারের মেনুতে ফ্যাট ফ্রি দুধের সাথে ফল মিশিয়ে ওটস খেতে হবে। কারণ এটি শরীরের এনার্জি বাড়ায় এবং পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবেঃ পেটের মেদ কমাতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। বাইরের কোমল পানীয় পরিহার করতে হবে। কারণ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে আমাদের শরীরে এটি মেদ কাটাতে সাহায্য করে। এছাড়া পেটের মেদ কমাতে ঘরোয়া উপায়ে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সঙ্গে অর্ধেক লেবু ও এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে পেটের অতিরিক্ত মেদ কেটে যায়। এছাড়া একটু আদা থেতো করে এক গ্লাস পানির সাথে সেদ্ধ করে অর্ধেক লেবুর রস ও একটু মধু মিশিয়ে খেলে মেদ কেটে যায়। নিয়মিত ঘরোয়া উপায়ে এ মিশ্রণ গুলো খেলেও পেটের মেদ কেটে যায়।
- হেলদি ডায়েট মেনু অনুসরণ করতে হবেঃ পেটের মেদ কমাতে হেলদি ডায়েট মেনু অনুসরণ করতে হবে। একবারে পেট ভরে না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে অর্থাৎ দৈনিক ৬-৭ বার খেতে হবে। এতে ক্ষুধা ভাব কেটে যায় এবংখাওয়ার পরিমানও কমে যায়।খাবারে তেল মশলা কম খেতে হবে। লাল আটার রুটি ও লাল চালের ভাত খেতে হবে। রান্নয় ওলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন সয়াবিন ও সরিষার তেলের পরিবর্তে।খাবারে মাছ, ডিম, শাকসবজি ও সালাদ খেতে পারেন এবং খাবারের ১৫-২০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান করুন।ফলে ক্ষুধা কমে যাবে এবং খাবারের এক ঘন্টা পর পানি পান করুন ও রাতে ঘুমানোর দুই ঘন্টা আগে খাওয়া শেষ করুন।
- সপ্তাহে চার দিন ব্যায়াম করতে হবেঃ পেটের মেদ কমানোর জন্য উপরের ব্যায়াম গুলো হচ্ছে উত্তম সমাধান। আমরা জিমে না গিয়েও ঘরে বসে উপরের কিছু ব্যায়াম করার মাধ্যমে পেটের মেদ কমাতে পারি। যা করতে বাড়তি কোনো উপকরণের প্রয়োজন হয় না। সপ্তাহে অন্তত চার দিন ৪০-৫০ মিনিট করে ব্যায়াম করতে হবে। সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা প্রভৃতি পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
- দৈনিক আট ঘণ্টা করে ঘুমাতে হবেঃ পেটের মেদ কমানোর জন্য আমাদের দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে ঘুমাতে হবে। দুই ধরনের হরমোন আমাদের শরীরে কাজ করে। আমাদের পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ক্ষুধা বেড়ে যায় ফলে গ্রীলিন হরমোন তৈরি হয় যা আমাদের ক্ষুধা ভাবকে বাড়িয়ে দেয়।তাই খাওয়ার ফলে আমাদের পেটের মেদ বেড়ে যায়। আর পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ল্যাকটিন হরমোন কমে যেতে থাকে। তাই দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুম আমাদের শরীর ফিট রাখে এবং পেটের মেদ কমাতে সহায়তা করে।
তাই নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের পেটের মেদ কমানো সম্ভব।
0 মন্তব্যসমূহ