রমজানের প্রথম দশ দিনের ফজিলত


রমজানের প্রথম দশ দিনের ফজিলত

রমজানের প্রথম দশ দিনের ফজিলত ।রমজানে প্রথম দশ দিন হচ্ছে রহমত ।রমজানে প্রথম ১০ দিন থেকেই যদি বান্দা সঠিক নিয়মে রোজা রেখে সংযমে থাকে, রমজানের হক আদায় করে হালাল রুজির সেহরি খায় ও ইফতার করে সুদ ঘুষ থেকে বিরত থাকে। 

কারো সাথে খারাপ ব্যবহার না করে, মিথ্যা কথা বলা পরিহার করে এভাবে সংযমে থেকে সারাদিন কাটিয়ে দেই এবং এভাবে পুরো রমজান মাস রোজা রাখার নিয়ত করে তবে তার জন্য রহমত শুরু হয় প্রথম রমজান থেকে যা রমজানের শেষ পর্যন্ত তার জন্য নির্ধারিত থাকে ।

রোজাদারদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে যারা পাপ ও বর্জনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকেন ।তবে সিয়াম  সাধনার মাঝে কোন ভুল ত্রুটি হলে তওবা ও ইস্তেগফার করে নিজেকে সংশোধন করা যায়।বান্দা যখন রোজার প্রথম ১০ দিন একান্ত নিষ্ঠা আন্তরিকতার সাথে সিয়াম পালন করে তখন তারা আর সেই মানুষ থাকে না, তাদের মাঝে সৎ গুনাবলী বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে যায় ও প্রকৃত মুমিন ব্যক্তি হয়ে ওঠে ।

    মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,” রমজান মাস এমন এক মাস যে প্রথম ১০ দিন রহমত মধ্যে দশ দিন মাগফিরাত ও শেষ ১০ দিন নাযাত অর্থাৎ জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় ।”

    আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,  “বেহেশতের মধ্যে রাইয়ান নামক এক দরজা আছে, যে দরজা দিয়ে কেবল কেয়ামতের দিন রোজাদার লোকেরা প্রবেশ করতে পারবেন । সেদিন ঘোষণা দেওয়া হবে রোজাদার লোকেরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে, তাদের প্রবেশের পরই বেহেস্তের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

    পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “তোমরা আমার ভালোবাসা পেতে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করো।” 

    মুসলিম শরীফের এক হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, “যারা রমজানে প্রথম প্রথম দিন থেকে শেষ রমজান পর্যন্ত রোজা রেখেছে তারা সেই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপ রূপে জন্ম দিয়েছিল ।”

    অর্থাৎ মায়ের গর্ভ থেকে সন্তান যেমন নিষ্পাপ হয়ে ভূমিষ্ঠ হয়, রমজানের ৩০ দিন রোজা রাখার মাধ্যমে ঠিক তেমনিভাবে আমরাও নিষ্পাপ হতে পারি ।

    হাদিস শরীফে আছে ,যখন মহান আল্লাহ কাউকে ভালোবাসেন তখন জিব্রাঈল  (আ:) কে বলেন, ওই ব্যক্তি আমার প্রিয় তাই তুমিও তাকে ভালোবাসো ।আসমানে ঘোষণা করে দেওয়া হয় যে, ওই ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা কাজেই তোমরাও তাকে ভালবাসতে থাকো ।অর্থাৎ জমিন বাসীর অন্তরে তার মহব্বত ঢেলে দেওয়া হয়।ফলে সবাই তাকে ভালবাসতে ও তার জন্য দোয়া করতে থাকে ।

    রমজানে রোজা রাখার ফজিলত 

    রোজা রাখা ফরজ, যেখানে নফল ইবাদতের অনেক ফজিলত। আর ফরজ ইবাদতের ফজিলত তো অসীম, যা বলে শেষ করা যাবে না। ইবাদতের মৌসুম ই হচ্ছে রমজান মাস, যে মাসে আল্লাহ তায়ালা অফুরন্ত কল্যাণ ও বরকত দান করেন। 

    মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, “রমজান মাস, যাতে নাযিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন,বিশ্ব মানুষের হেদায়েত, সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী।” (সুরা বাকারাঃ আয়াত ১৮৫)।

    রমজানের প্রথমে রহমত, মধ্যে মাগফিরাত এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়।

    নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে।”( বুখারী শরীফ ১৯০১)

    আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, নবীজি সাঃ বলেন, “যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন জান্নাতের দরোজা সমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং দোযখের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলা বদ্ধ করে রাখা হয়।” (বুখারী শরীফঃ১৮৯৯; মুসলিম শরীফঃ ১০৭৯)।

    উম্মতে মোহাম্মদীকে পাঁচটি মহা বৈশিষ্ট্য দান

    আল্লাহ তায়ালা উন্মতে মোহাম্মদীকে পাঁচটি মহা বৈশিষ্ট্য দান করেছেন যা অন্য কোন উম্মতকে দান করেন নি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত।মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদের বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ করবে এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।”(সূরা আল ইমরান আয়াত ১১০)।

    নবীজি সাঃ বলেন,আমার উম্মত কে রমজানে পাঁচটা বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে যা আগের কোন উম্মতকে দেওয়া হয়নি।সে বৈশিষ্ট্য ৫টি হচ্ছেঃ 

    ১। সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের শুঘ্রাণ থেকেও উত্তম।

    ২। ফেরেশতাগণ  ইফতারের আগ পর্যন্ত রোজা পালনকারীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেন। 

    ৩। রমজানে পুরো মাস দুষ্ট শয়তানকে শৃঙ্খলা বন্ধ করে রাখা হয় ফলে এ মাসে তারা মানুষকে গোমরাহীর পথে নিতে পারে না।

    ৪। প্রতিদিন মহান আল্লাহ তায়ালা তার জান্নাতকে সজ্জিত করে বলেন, অতি শীঘ্রই তোমাদের কাছে আসবে আমার নেক্কার বান্দাগণ যারা অনেক কষ্ট স্বীকার করে ।

    ৫। রোজা পালনকারীদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়ে থাকে রমজানের শেষ রাতে। বলা হলো হে, আল্লাহর রাসূল;কদরের রাতে কি এই ক্ষমা করা হয়?রাসূল সাঃ বলেন না বরং কোন শ্রমিককে তখনই পারিশ্রমিক দেওয়া হয় যখনই সে কাজ শেষ করে।(মুসনাদে আহমাদ)।

    নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,”আদম সন্তানের প্রতি কাজে ১০ গুন থেকে ৭ শত গুণ বৃদ্ধি করা হয় ।মহান আল্লাহ বলেন, কিন্তু রোজা ছাড়া।কেননা তা আমার জন্য, তাই এর প্রতিদান আমি নিজে দেব। 

    রোজা পালনকারীর জন্য রয়েছে দুটি খুশি

    রোজা পালনকারীর জন্য রয়েছে দুটি খুশি। যখন সে ইফতার করবে এবং যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। তখন সে আনন্দিত হবে রোজার বিনিময়ে।

    এর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক আমলেরই কাফফারা আছে। রোজা আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেব।( বুখারী শরীফ ৭৫৩৮, মুসনাদে আহমাদ ১০৫৫৪)।

    রোজার সবর অর্থাৎ ধৈর্য থেকে এসেছে।

    রোজা সবর অর্থাৎ ধৈর্য থেকে এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, “কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে,কোন হিসাব ছাড়াই।”( সূরা জুমারঃ আয়াত ১০)।

    তিন ধরনের ধৈর্য রয়েছে। এবং রোজার মধ্যে একত্রিত হয় এই তিন ধরনের ধৈর্য।ধৈর্য ধারণ করা আল্লাহর আনুগত্যের উপর, ধৈর্য ধারণ করা হয় হারাম জিনিস থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এবং ধৈর্য ধারণ করা হয় আল্লাহর ফয়সালা কৃত কষ্টের উপর ।এ সম্পর্কে নবীজি বলেন, “রমজান মাস ধৈর্যের মাস আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত।” (ইবনে খুযাইমা ১৮৮৭ )।

    হযরত আবু উবাইদাহ রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন, নবীজি বলেন, “রোজা ঢাল স্বরুপ যতক্ষণ পর্যন্ত তা ভেঙ্গে না ফেলে।” (মুসনাদে আহমাদ ১৬৯০।

    হযরত আবু আলীয়াহ রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন,নবীজি বলেন ,”রোজা পালন কারী গীবত না করা পর্যন্ত ইবাদতে থাকে, যদিও সে বিছানায় ঘুমায়।”

    রোজাদার ব্যক্তির রোজা অবস্থায় ও ইফতারের সময় তার দোয়া কবুল করা হয় ।

    ইমাম তিরমিজি বর্ণনা করেন, নবীজি বলেন, “আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী,আহারকারীর মর্যাদা হল ধৈর্যশীল রোজা পালনকারীর মত।”( তিরমিজি শরীফ ২৪৮৬)। 

    রোজা পালনকারীগণ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত

    ১। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ও কামভাব পরিত্যাগ করেছে,এই শ্রেণীর লোকেরা মহান আল্লাহর সঙ্গে ব্যবসা করেছে। সকলকেই  আল্লাহ তার কর্মের প্রতিফল দেবেন।যারা মহান আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে ব্যবসা করবে তারা বিরাট লাভবান হবেন। নবীজী সাঃ বলেন, “আল্লাহর তাকওয়ার উদ্দেশ্যে যা কিছুই তুমি পরিহার কর, তিনি তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেবেন।”( মুসনাদে আহমাদঃ ২০৭৩৯)। 

    মহান আল্লাহ বলেন, “বিগত দিন সমূহে তোমরা যা আগে প্রেরণ করেছ তার বিনিময়ে তোমরা তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান কর”।( সুরা হাক্কাহঃ আয়াত ২৪)।

    হযরত ইয়াকুব ইবনে ইউসুফ রাদিয়াল্লাহু বলেন, নবীজি বলেন,  “আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিনে তার অলিদের বলবেন, হে আমার বন্ধুগণ ! আমি যখনই তোমাদের দিকে তাকাতাম তখনই তোমাদের ঠোঁট খাদ্যাভাসে শুষ্ক (কুচকানো) দেখতাম,পেট ক্ষুধায় কাঁপতো, তোমাদের চোখ বিনিদ্র দেখতাম, তাই আজকে তোমরা নিয়ামতে থাকো.। তোমরা পেয়ালা ভরা সরাব পান করো, তোমরা আগে যা প্রেরণ করেছ তার বিনিময়ে তৃপ্তি সহকারে খাও।”

    আল্লাহ তার ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা আমার বান্দাকে দেখো সে তার স্ত্রী, কামভাব, খাদ্য ও পানীয় আমার সন্তুষ্টির জন্য্‌ ,আমার কাছে যা কিছু আছে তার বিনিময়ে পরিত্যাগ করেছে। আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি,তোমরা সাক্ষী থাকো। 

    ২। কিছু রোজা পালনকারী তাদের মস্তিষ্ক ও এর চিন্তাধারাকে হেফাজত করে, মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী পরীক্ষাকে স্মরণ করে, তারা আখিরাত কামনা করে থাকে এবং দুনিয়ার সকল ভোগ বিলাসিতা ত্যাগ করে থাকে। এদের জন্য ঈদুল ফিতর হবে তার রবের সাথে সাক্ষাতের দিন।

    রমজানের ফজিলতের শেষ কথা

    জান্নাতিগণ জান্নাতে সুঘ্রাণ পাবে। তারা বলবে,হে আমাদের মালিক! জান্নাতে প্রবেশের পর এত  সুঘ্রাণ আর কখনো পায়নি ,তাদের বলা হবে- এ হলো রোজা পালনকারীর মুখের সুঘ্রাণ। 

    তাই মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের রোজা পালন করার, রোজার ফজিলত ও মর্যাদা বোঝার তৌফিক দান করুন। আমীন। 


    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ